উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে নারীর ভূমিকা বিষয়ক ফ্লিপচার্ট

মুখবন্ধ

বর্তমান বিশ্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদ ও সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেমন ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব, নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মধ্যে এই অপরাধপ্রবণতা প্রবল। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশে সহিংসতা ও অপরাধের মাত্রা ক্রমবর্ধমান। সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী, শিশু, যুব সম্প্রদায় এমনকি বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সাধারণ জনগোষ্ঠী। জাতীয়ভাবে এই উগ্রবাদ ও সহিংসতা কমানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিলেও তা প্রতিরোধে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত কার্যকরি হচ্ছে না। এমনকি সরকারিভাবে নারী, শিশু নির্যাতন বিরোধী নীতিমালা, উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় ভূক্তভোগী জনগোষ্ঠী ফলপ্রসু ও কার্যকরি সুফল পায়না। ফলে সাধারন জনগণ উদ্বেগ ও নিপরপত্তাহীনতায় ভুগছে।

উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে কক্সবাজার জেলার রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায় উগ্রপন্থী গ্রুপ দ্বারা আক্রান্ত হলে এ অঞ্চলের উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ে। কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ। এই জেলা সমুদ্র উপকূলবর্তী এবং অনেক নদী পরিবেষ্টিত থাকায় ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’ অংশ হিসেবে বিবেচিত। ভৌগোলিক দিক দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অবৈধ পথে চোরাচালান ও মানব পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অনিবন্ধিত বিভিন্ন লোকজনের কারণে সহিংসতা ও অনৈতিক কার্যকলাপ দনি দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। সামাজিকভাবে স্থানীয় ও রাষ্ট্রীয় শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলায় আবহমানকাল ধরে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে জীবন ও জীবিকার লক্ষ্যে বসবাস করে আসলেও বিগত কয়েক বছর ধরে সামাজিকভাবে লিঙ্গ বৈষম্য, বোকরত্ব, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে সহিংসতা, ধর্মীয় সহিংসতা, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি এবং হতাশাগ্রস্ত যুব সম্প্রদায়ের মাঝে অনৈতিক ও উগ্রবাদ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। GCERF এর সহায়তায় ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (Chairperson of Country Support Mechanism) প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততায় ও স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে ইপসা সিভিক কনসোর্টিয়াম (ইপসা, শেড, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা এবং হেল্প-কক্সবাজার)’র উদ্যোগে কক্সবাজার জেলায় জুলাই ২০১৬ থেকে “কক্সবাজার জেলার জনগণের সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধ” শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলায় নির্বাচিত ও নির্ধারিত ১৬২টি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ৩২৪ জন ছাত্র-ছাত্রীকে উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে জীবন দক্ষতা শিক্ষা (LSE)’র উপর প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে এই ৩২৪ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এ ফ্লিপ চার্টের মাধ্যমে নিজ নিজ বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের উগ্রবাদ ও সহিংসতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সেশন পরিচালনা করবে। তাছাড়া এ প্রকল্প কক্সবাজার জেলার বেকার, ঝরে পড়া যুব জনগোষ্ঠী ও নারী সমাজকে উগ্রবাদ ও সহিংসতা সচেতন ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।