Skip to main content
ইপসা জাতিসংঘের ”ইকোনোমিক এন্ড সোস্যাল কাউন্সিল” এর স্পেশাল কন্সালটেটিভ স্টাটাস প্রাপ্ত একটি সংগঠন

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে ইপসা’র সংবাদ সম্মেলন ও নিহত শ্রমিকদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

Candle light vigil

ইপসা’র আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার  গত ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘জাহাজ ভাঙ্গায় নিরাপত্তার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাহাজ পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বিধিমালা’র জন্য সুপারিশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন ইপসা’র সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী শাহীন। ইপসার সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. ওমর শাহেদ হিরো সঞ্চালনায় ইপসা’র সাথে সংহতি জানিয়ে সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইলমার নির্বাহী পরিচালক জেসমিন সুলতানা পারু, বিবিএফের নির্বাহী পরিচালক উৎপল বড়ুয়া, সংশপ্তকের নির্বাহী পরিচালক মো. লিটন চৌধুরী, সপ্নীল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. আলী শিকদার, সুট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক জেবুন্নেছা, মাতৃভূমির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বাপ্পি, সবুজের যাত্রার নির্বাহী পরিচালক সায়েরা বেগম প্রুমুখ।

Press conference

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস জাহাজভাঙ্গা শ্রমিকদের নিরাপত্তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত দশ বছরে সরকারের শিল্প মন্ত্রানালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের এবং বিভাগের নানা উন্নয়নমূখী কার্যক্রম এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়নে অভূতপূর্ব ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। দেশের শিপ ইয়ার্ডে শ্রমিক মৃত্যু শূন্যে নিয়ে আসা এবং হংকং কনভেনশনের আলোকে গ্রিন ইয়ার্ড তৈরির মাধ্যমে আধুনিকায়নে নামছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ড মালিকরা। তবে বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গ্রিন ইয়ার্ডের সংখ্যা বাড়লেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা মাত্র ১টি। আধুনিকায়নে গেলেও এখনো অধিকাংশ ইয়ার্ডগুলোতে পরিবেশ দূষণ ও শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

participants

জাহাজ ভাঙা ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে একটি বড় সমস্যা হলো এই শিল্পের অধিকাংশ শিপ ইর্য়াডে র্দূঘটনায় শ্রমিকদের প্রাণহানীর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে এ শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস’ হচ্ছে। আর এর জন্য শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবই প্রধান কারণ। চলতি বছরেও নানা দূর্ঘটনায় ইতোমধ্যে সাতজন শ্রমিকের প্রাণহানী হয়েছে। সাধারণত শীতের শুরুতেই দূর্ঘটনার পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতে শ্রমিক হতাহতের সংখ্যা বেশী হয়। এছাড়া গত ১৫ বছরে বিভিন্ন জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় ২১৬জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শুধু গত পাঁচ বছরেই শ্রমিক মারা গেছে ৭৫ জন। বছরওয়ারি শ্রমিকদের প্রাণহানীর সংখ্যাই এই শিল্পের ঝুঁকির পরিমাণ নির্দেশ করে দেয়।

Human chain in front of press club

ইপসা’র মতামত

জাহাজ ভাঙ্গা এবং জাহাজ পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের শ্রম নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা ও শ্রমিক কল্যাণ বিষয়ে প্রচলিত নিয়ম বিবেচনায় রেখে কিছু সুনির্দিষ্ট মতামত ও সুপারিশ উপস্থাপন করে। এগুলোর মধ্যে ছিল প্রত্যেক জাহাজের ক্ষতিকারক বর্জ্যের একটি যথাযথ তালিকা প্রস্তুত করা, জাহাজ কাটা বা বিভাজন শুরুর পূর্বে মন্ত্রণাালয় এর নিকট জাহাজের সকল তথ্যাদি প্রদানপূর্বক যথাযথ অনুমতি গ্রহণ এবং অনুমতির পূর্বে জাহাজ ভাঙ্গা রোধে জরিমানার ব্যাবসস্থা করা, ইয়ার্ডে ব্যবহৃত গ্যাস ডিটেকশন মিটার সহ অন্যন্যা যন্ত্রপাতিগুলো নিয়মিত ISO 17025 Certified ল্যাব থেকে পরীক্ষণ করা, দূর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত হলে এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে গেলে বা অঙ্গহানী হলে বা বিস্ফোরণের আগুনে ১০% এর অধিক পুড়ে গেলে বা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে বা দুই-এর অধিক অস্রোপচারের (সার্জারী) প্রয়োজন হলে আহত শ্রমিককে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা, জাহাজ কাটার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে জাহাজে আগুন সৃষ্টি রোধকরণ, আর্ন্তজাতিক কমপ্লায়েন্স এবং মান বজায় রেখে জাহাজের ক্ষতিকারক বর্জ্যের তালিকা বিবেচনায় নিয়ে জাহাজ বিচিং হওয়ার পর সম্পূর্ণরূপে জাহাজ বর্জ্য মুক্ত করার পর জাহাজ কাটা বা বিভাজনের অনুমতির প্রদান, সেইফটি অফিসারদের সনদপ্রাপ্ত বা সরকারি ভাবে অনুমোদিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ প্রদান, জাহাজ ভাঙ্গা ও পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়নে চট্টগ্রামে One Stop Service চালু, অগ্রিম ভ্যাট জটিলতা নিরসনে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ, জাহাজের বর্জ্য ব্যবস’াপনার লক্ষ্যে অতিদ্রুত টিএসডিএফ (ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি) স্থাপনসহ ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন ইত্যাদি।

এদিকে, জাহাজভাঙ্গা শিল্পে নিহত শ্রমিকদেও স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে ইপসা। সাংবাদিক সম্মেলনের পর নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে ইপসার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ছাড়াও সুশীল সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।