জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের সুরক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা ও মনিটরিং প্রয়োজন
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ সমূহের মধ্যে সর্ব প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলপত্র তৈরী করলেও সময়ের ধারাবাহিকতায় জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমন্বিত জলবায়ু পরিবর্তন নীতি প্রণয়ন এখন সময়ের দাবী। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করব। ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইপসার উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্থানচ্যুত মানুষের অধিকার বিষয়ক গোল টেবিল আলোচনা ও ম্যাপিং স্টাডি রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ এমপি, এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, স্থানচ্যুত মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে গবেষনা করতে হবে এবং স্থানচ্যুত মানুষদের মনিটরিং প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পরবর্তী সম্মেলনে জলবায়ু স্থানচ্যুতি প্রসঙ্গকে বাংলাদেশের পÿ থেকে জোরালো দাবী উপস্থাপন করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
দ্বীপ উন্নয়ণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইপসার প্রধান নির্বাহী মো: আরিফুর রহমান এবং অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলাপম্যান্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ’জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানচ্যুত মানুষের অধিকার’ শীর্ষক সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইপসার এইচএলপি প্রকল্পের টিম লিডার মোহাম্মদ শাহ্জাহান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলাপম্যান্টের প্রধান নির্বাহী মো: সামসুদ্দোহা।
গোলটেবিল আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন জার্মান দুতাবাসের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা জনাব সুজিত চৌধুরী, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের একেএম সিরাজুল ইসলাম, ডিজাস্টার ফোরামের গওহর নাইম, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের পরিচালক এলিসন সুব্রত বারই, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের মিহির বিশ্বাস, নেটওয়ার্ক অব ক্লাইমেট চেঞ্জ, বাংলাদেশের মো. সিরাজুল ইসলাম বিজয়, উন্নয়নধারা ট্রাষ্টের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রসুল বাবুল, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর গবেষণা খুবই কম, তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্যোগ এবং উন্নয়ন কমীদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় প্রয়োজন। সভায় মূল প্রবন্ধের উপর আলোকপাত করতে গিয়ে বক্তারা বলেন বাংলাদেশে বিদ্যমান সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া দূনীতিমুক্ত ও অবৈধ দখলমুক্ত করে জলবায়ু স্থানচ্যুত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করতে হবে। স্থানচ্যুত মানুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে খাসজমি বন্টনে এ সংক্রান্ত নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অথচ এর জন্য উন্নত বিশ্বের ভূমিকাই বেশী। এজন্য তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
উলেøখ্য, সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সংস্থা ডিসপ্লেসমেন্ট সল্যুয়েশন-এর সহযোগিতায় ইপসা ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ হাউজিং, ল্যান্ড এন্ড প্রোপার্টি রাইটস ইনিটিয়েটিভ শিরোনামে জলবায়ূ স্থানচ্যুত মানুষের সমস্যা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন সম্পর্কিত বেশ কিছু নীতিমালা বাংলাদেশ সরকারের থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনে স্থানচ্যুত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোন নীতিমালা গ্রহণ করেনি। এই নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ইপসা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মতবিনিময় করে যাচ্ছে।