কক্সবাজারে ইপসা‘র উগ্রবাদ ও সহিংসতা বিষয়ক প্রকল্পের উদ্বোধন
সারা বিশ্বের মত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সহিংসতা ও অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী, শিশু, যুব সম্প্রদায় এমনকি বিভিন্ন সংখ্যলঘু সম্প্রদায় ও সাধারণ জনগোষ্ঠী। জাতীয়ভাবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই অপরাধপ্রবণতা কমানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও তৃণমূল পর্যায়ে সাধারন জনগনকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে বেশী। সমাজের প্রতিটি স্তরের অংশগ্রহনে উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
উগ্রবাদ ও সহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি প্রতিরোধে সকলের যৌথ উদ্যোগ ও অংশগ্রহন প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই শান্তিপ্রিয়। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সমাজে অশান্তি, সহিংসতা আমাদের কারোই প্রত্যাশিত নয়। তবুও মাঝে মাঝে কিছু সুযোগসন্ধানী, স্বার্থান্বেষী মানুষ সামাজিক শান্তি, সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। আর বারেবারে শান্তিপ্রিয় মানুষেরা এই সব অপচেষ্টা কৃতিত্বের সাথে রুখে দিয়েছে। দল-মত, শ্রেণী-পেশার উর্ধে উঠে বাংলাদেশের মানুষ সহিংসতা প্রতিরোধ করেছে, সমাজে শান্তির বাতাবরণ বিনষ্ট হতে দেননি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ ঐহিত্যগত ভাবে সামাজিক সম্প্রীতির মূল্যবোধ ধারণ করে যা বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বড় ভিত্তি আর এটি বজায় রাখার জন্য যুবরা খুব বেশী অবদান রাখতে পারবে।
বিগত সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা দেশে সহিংসতা ঘটতে এবং সহিংসতার পূর্বাভাস দেখেছি। এ সহিংসতা ধর্মকে ব্যবহার করে, সাপ্রদায়িকতাকে উষ্কে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে তা’ সবার কাছেই দিবালোকের মতই প্রকাশ্য। এ দেশের মানুষ বরাবরই শান্তির সপক্ষে। সমাজে কোন সহিংস ঘটনা ঘটুক তা’ এ দেশের সাধারণ মানুষ কখনও প্রত্যাশা করে না। এ উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা অতীব জরুরী এবং সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
গ্লোবাল কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট এন্ড রিজিলিয়েন্স ফান্ড-GCERF এর সহায়তায় ও বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট মন্ত্রনালয়ের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ইপসা ‘‘কক্সবাজার জেলার জনগণের সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধ” শীর্ষক প্রকল্প’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাগণ উপরোক্ত মতামত প্রদান করেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ আসাদুল ইসলাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আবদুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার এবং ইপসা’র প্রধান নির্বাহী মোঃ আরিফুর রহমান।
ভায় অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুর ইসলাম, রামু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাং শাহজাহান আলী।
প্রকল্পের মূল বিষয় উপস্থাপন করেন ইপসা সিভিক প্রকল্পের টীম লিডার খালেদা বেগম। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলার আওতায় ৪টি পৌরসভা ও ৭১ টি ইউনিয়নে উগ্রবাদ ও সহিংসতা নিরসন, সামাজিক সাম্যতা বজায় রাখা, বেকারত্ব দূরীকরন, ও যুব সম্প্রদায়ের মানসিক সুস্থ বিকাশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহন করেছে।
ইপসা কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন বয়সের যুবদের নিয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আলাদা আলাদাভাবে সংগঠিতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করবে। এছাড়াও এ প্রকল্প নারী, সাধারণ জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের এ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করবে। পাশাপাশি কক্সবাজর জেলার ১৬২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উগ্রবাদ ও সহিংসতা প্রতিরোধে অংশগ্রহনমূলক বিভিন্ন সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রতিনিধি, যুব উন্নযন অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম সমিতির প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, এনজিও ও সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী প্রতিনিধি প্রমূখ।