শিশু ও নারী নির্যাতন রুখে দাঁড়ান – ইপসা আয়োজিত মানব বন্ধনে বক্তারা
শিশু ও নারীদের উপর করা সব ধরনের নির্যাতনের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন সংগঠন- ইপসা। গত ৭ অক্টোবর বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে সরকারী নিদের্শনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রামের বিশটিরও অধিক উন্নয়ন সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয়।
মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্যে ইপসার কর্মসূচি সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী শাহিন বলেন, গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি, তার মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২০৮টি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৩টি। আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। আর চলতি বছরে প্রতিদিন অন্তত ৩ জন নারী ধর্ষন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই হিসাব অসম্পূর্ণ। পত্রিকায় সব খবর আসে না। বিশেষ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের চাপে অনেক ধর্ষনের তথ্য চাপা পড়ে যায়। আবার মজনুর মতো পথে পথে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরেও ধর্ষনের ঘটনা ঘটাবার সাহস পায়। নারীর নিরাপত্তা দেওয়া এবং নারী নির্যাতন, ধর্ষণ প্রভৃতি অপরাধ প্রতিহত করার দায়িত্ব শুধু সরকার ও সরকারি দলের নয়। সমাজের সকল শ্রেনিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে শিশু ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।
ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, বিগত কয়েকমাস ধরে দেশে শিশু ও নারী নির্যাতন অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষন, শিশু ও নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের সহিংসতার দ্রুত বিচার করতে হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষন বন্ধে প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন পরিবর্তন করতে হবে। উন্নয়নকর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ ধর্ষন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে একইসাথে অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের সচেতনতাই পারে আমাদের এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে। সন্তানকে বাসায় শিক্ষা দিতে হবে নৈতিকতা ও সুশিক্ষা এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নারীর প্রতি সম্মানের মানসিকতা সৃষ্ঠির জন্য প্রতিনিয়ত নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে মানববন্ধনে চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি জানায় ইপসার উপ পরিচালক নাছিস বানু। তিনি বলেন, শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে সকল ধরনের শিশু ও নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে করতে হবে, তিন মাসের মধ্যে ধর্ষনের বিচারকাজ নিষ্পন্ন করতে হবে, ধর্ষনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং নির্যাতিত শিশু ও নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি শিশু ও নারীদের জন্য একটি নিরাপদ দেশের সপ্ন দেখেছি। সেই সপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে আন্তরিক হতে হবে।
ইপসার প্রোগ্রাম অফিসার মো. ওমর শাহেদ হিরোর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিউজের) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডেও সাবেক কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন, এন্টি ট্যোবেকো মিডিয়া এলায়েন্সের (আত্মা) আহ্বায়ক মো. আলমগীর সবুজ, আত্মার সদস্য কামরুল হুদা, ইপসার উপ পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের নির্বাহী পরিচালক উৎপল বড়–য়া, সপ্নীল ব্রাইট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সুইট বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাহী পরিচালক মোছা. জেবুন্নেছা, চট্টগ্রাম জিপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা কানিজ ফাতিমা, কাজীর দেউরি ব্যবসায়িক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, ৮ নং ওয়ার্ডের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার মোহাম্মদ মাসুদ, প্রগতিশীল যুব সংঘেল সভাপতি মো. হেফাজুর রশিদ, উষার আলো যুব সংঘের সভাপতি স্বর্ণা আক্তার, ইয়োথ ভয়েস অব চট্টগ্রামের সভাপতি রিফাত জাহান নদী, শতদল যুব সংঘের সভাপতি বৈশাখী আক্তার সুমি, সপ্ন ও আগামীর সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, জাগ্রত তরুণ সংঘের সভাপতি হুমায়ুন কবির প্রমুখ। সভায় বক্তারা মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানান।