চট্টগ্রামে পাহাড় না কেটে পরিবেশ অক্ষত রেখে পাহাড় ব্যবস্থাপনার কথা ভাবছে সরকার – বিভাগীয় কমিশনার

নুসরাত সুলতানা, অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন), বিভাগীয় কমিশনার অফিস, চট্টগ্রাম সভাপতিত্বে ১৯ই নভেম্বর ২০২৫ বুধবার হোটেল রেডিসন ব্ল তে ইপসার উদ্যোগে পাহাড়ধস ঝুঁকি সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিতে পাহাড়ধস ঝুঁকি একত্রীকরণের উপর অ্যাডভোকেসি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
“চট্টগ্রামে পাহাড় না কেটে পরিবেশ অক্ষত রেখে পাহাড় ব্যবস্থাপনার কথা ভাবছে সরকার। এতে প্রাথমিক ভাবে সাড়া প্রদান করছে সরকার ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়”
-ড. মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম
উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো: আশরাফুল আমিন, প্রধান নিবার্হী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং সচিব, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, মোঃ রিদওয়ান হোসেন, অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন), বিভাগীয় কমিশনার অফিস, চট্টগ্রাম, প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মহিবউল্যা, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়; সহযোগী অধ্যাপক ডঃ ইসরাত জাহান, নগর ও আঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্ট্রগ্রাম; কামাল হোসেন, সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ, সিডিএসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি; জনাব আবদুর রহমান খান, উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, চট্টগ্রাম; বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গনমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ বাশঁখালী উপজেলার অন্তর্গত সাধরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পুকুরিয়া ইউনিয়নের প্যাণেল চেয়ারম্যান সহ পাহাড়ধস ঝুঁকিতে বসবাসরত জনগোষ্টির প্রতিনিধিগন উপস্থিতি ছিলেন।

ইপসা, সেইভ দ্যা চিল্ড্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় ও রাইম্স এর কারিগরি সহায়তা কর্তৃক বাস্তবায়িত “এন্টিসিপেটরি এ্যাকশন ফর ল্যান্ড স্লাইড কসিং ডিসেপ্লেসমেন্ট ইন চট্টগ্রাম এন্ড বান্দরবান ডিষ্ট্রিকস ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় অ্যাডভোকেসি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য ইপসার কার্যক্রম সম্পর্কে তুলে ধরেন নাছিম বানু শ্যামলি, পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ), ইপসা এবং কর্মশালার সারসংক্ষেপ এবং কর্মসূচী ও অগ্রগতি নিয়ে উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন জনাব সাইমন রহমান, সিনিয়র ম্যানেজার, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ।
উক্ত কর্মশালা উদ্বোধন করেন নুসরাত সুলতানা, অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন), বিভাগীয় কমিশনার অফিস, চট্টগ্রাম। ভূমিধসের আগাম সতর্কতা উপর উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন আবদুর রহমান খান, উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, চট্টগ্রাম। এবং প্রকল্প কর্মসূচি এবং অগ্রগতি উপর একটি উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন মোঃ আবু তৈয়ব, সিনিয়র অফিসার, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং আসিফ উদ্দিন বিন নুর, বাইম্স।
এছাড়াও বিদ্যমান পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতি ও এর গ্যাপ বিশ্লেষণ উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার। উক্ত উপস্থাপনায় ড. মাহমুদ ঝুঁকি-সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, বাংলাদেশের নগর এলাকায় বিভিন্ন বিপদ ও ঝুঁকি, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিপদ, বাংলাদেশে ভূমিধসের ঘটনার কিছু সংক্ষিপ্ত চিত্র, বাংলাদেশে ভূমিধসের আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক মাত্রা, এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালার পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার এবং মোঃ আবু তৈয়ব, সিনিয়র অফিসার, এন্টিসিপেটরি এ্যাকশন, সেভ দ্যা চিলড্রেন, বাংলাদেশ এর তত্ত্বাবধানে গ্রুপ ওয়ার্ক, খসড়া সুপারিশ প্রণয়ন ও উন্মুক্ত আলোচনা পরিচালিত হয়।
বিশেষ অতিথি বক্তব্য হিসেবে জনাব মোঃ আশরাফুল আমিন, প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং সচিব, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বলেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নতুন একটি এপস চালু করবে সিটি কর্পোরেশন। এটি থেকে সতর্কতা সচেতনতার পাশাপাশি নানা অভিযোগ ও অনিয়ম অবগত হওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধান অতিথি বক্তব্য হিসেবে ড. মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বলেন আমাদের পরস্পর বিরোধী পলিসি আছে, যার কারনে আমরা কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি, মনে হয় তা হল “জনসংখ্যা বিস্ফোরন”। যার কারনে মানুয়ের জন্য বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন পলিসি তৈরি হচ্ছে। পলিসি তৈরি করতে হলে, গবেষণা দরকার। গবেষণার মাধ্যমে সমস্যা রেব করা দরকার। তবে অনেক সময় আমরা গবেষণার ফলাফল ব্যবহার করেত পারি না। কারন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, গবেষণা গুলো শুধূ মাত্র সনদ সংগ্রহের জন্য করা হয়। সমস্যা সমাধানের জন্য নয়। তবে, আশার বাণী হচ্ছে, আমরা সবাই একই বিষয় বা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি, চিন্তা করছি এবং সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে পাহাড় না কেটে, প্রকৃতিকে অক্ষত রেখে পরিবেশসম্মতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা ভাবছে সরকার। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে যেভাবে তাদের বিভিন্ন অফিস আদালত বাংলো নির্মাণ করেছিল, আমরাও সেভাবে সরকারি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এতে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। বুধবার চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক কর্মশালায় এই কথা জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো জিয়াউদ্দিন। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ইপসার আয়োজনে ইউরোপীয়ান কমিশন, সেভ দ্যা চিলড্রেন ও রাইমসের সহযোগিতায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আরও বলেন, এই বছর প্রশাসন অনেক তৎপর থাকায় পাহাড় ধসের ঝুকি মোকাবেলা করা গেছে৷ চট্টগ্রামে বড় কোন দুর্যোগ হয়নি। পাহাড় কাটায় জিরো টলারেন্স ও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে এবার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করা গেছে।
সভাপতি তার বক্তব্য বলেন, যে প্রকৃতিকে তার নিজস্ব অবস্থানে থাকতে দেওয়া জরুরি। এ জন্য আমাদের কী ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনো আমাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। আলোচনায় পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের বিষয়টি উঠে এসেছে, যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায়ই নিজেদের কাজের দায় স্বীকার করি না এবং দায়িত্ব পালনে ঘাটতি রেখে দেই। গবেষণা থেকে নীতি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আমাদের সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এভাবে অগ্রসর হলে সমস্যার সমাধানে আমরা এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারব।